Cradle to Cradle: Remaking the Way We Make Things লেখক: William McDonough এবং Michael Braungart

বই পর্যালোচনা: “Cradle to Cradle: Remaking the Way We Make Things”
লেখক: William McDonough এবং Michael Braungart

পরিচিতি:
“Cradle to Cradle: Remaking the Way We Make Things” বইটি একটি যুগান্তকারী রচনা, যা টেকসই উন্নয়ন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য নকশার ধারণা নিয়ে লেখা। এটি প্রচলিত “Cradle to Grave” অর্থাৎ উৎপাদন থেকে ব্যবহারের পর বর্জ্যে রূপান্তরিত হওয়ার ধারণার পরিবর্তে “Cradle to Cradle” মডেলের প্রস্তাব দেয়, যেখানে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা হয়। বইটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য স্থাপত্য, পণ্য নকশা, এবং উৎপাদন খাতে একটি বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।


মূল বিষয়বস্তু এবং আলোচনা:

১. “Cradle to Cradle” মডেলের ধারণা:

বইটি দেখায় যে, “Cradle to Cradle” মডেলটি কিভাবে প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত চক্রের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে। এটি একটি “নেই বর্জ্য” নীতি অনুসরণ করে, যেখানে পণ্য তৈরির প্রতিটি উপাদান পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হয়।

২. বর্জ্যহীন উৎপাদন:

লেখকরা প্রস্তাব করেন যে, প্রতিটি পণ্য এমনভাবে নকশা করা উচিত যা তার জীবনচক্র শেষে সম্পূর্ণভাবে পুনঃব্যবহারযোগ্য বা পুনর্নবীকরণযোগ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ:

  • প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে কম্পোস্টেবল পণ্য।
  • প্রযুক্তিগত উপকরণ ব্যবহার করে পুনঃচক্রিত পণ্য।

৩. অর্থনীতি এবং পরিবেশের সংহতি:

বইটি দেখায় কিভাবে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করা ব্যবসার জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক হতে পারে। এটি স্থাপত্য এবং উৎপাদন খাতে টেকসই সমাধান প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যয় হ্রাস এবং সম্পদ সংরক্ষণের উপর জোর দেয়।

৪. ডিজাইনে উদ্ভাবন:

“Cradle to Cradle” বইটি এমন নকশা উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়, যা পণ্য এবং স্থাপত্যে নতুনত্ব আনে। উদাহরণ হিসেবে সবুজ ভবন এবং পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং নকশার ধারণা বইটিতে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

৫. কেস স্টাডি:

বইটিতে বিভিন্ন সফল প্রকল্প এবং কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে, যেমন “Ford River Rouge Complex” এবং “Herman Miller’s Mirra Chair,” যা “Cradle to Cradle” নীতির ভিত্তিতে নির্মিত।


মূল শেখার পয়েন্ট:

১. পুনঃব্যবহারযোগ্য নকশা:
উৎপাদন খাতে এমন নকশার গুরুত্ব যা বর্জ্য কমিয়ে পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ তৈরিতে সহায়ক।

২. প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত চক্রের সমন্বয়:
প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত উপাদানের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের গুরুত্ব।

৩. সবুজ অর্থনীতি:
পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি এবং টেকসই নকশার মাধ্যমে ব্যবসার আর্থিক লাভ বৃদ্ধি।

৪. উন্নত পণ্য নকশা:
পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী এবং টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ।

৫. “Cradle to Cradle” মডেলের প্রয়োগ:
বিভিন্ন শিল্প এবং স্থাপত্য খাতে “Cradle to Cradle” ধারণার কার্যকর প্রয়োগ।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা:
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পরিবেশ এবং অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে “Cradle to Cradle” মডেলটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:

বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় “Cradle to Cradle” ধারণা কার্যকর হতে পারে।

২. সবুজ স্থাপত্য:

বাংলাদেশে পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্য এবং সবুজ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বইটির ধারণাগুলো প্রাসঙ্গিক।

৩. পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ:

বাংলাদেশে শিল্প খাতে স্থানীয় উপকরণ এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্যের প্রচলন “Cradle to Cradle” ধারণার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

৪. টেকসই অর্থনীতি:

বইটির নীতিমালা অনুসরণ করে বাংলাদেশের ছোট এবং মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে।


উপসংহার:
“Cradle to Cradle: Remaking the Way We Make Things” বইটি টেকসই উন্নয়ন এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য নকশার ক্ষেত্রে একটি অনন্য এবং উদ্ভাবনী ধারণা প্রদান করে। এটি শুধু পণ্য এবং স্থাপত্য নকশাতেই নয়, বরং অর্থনীতি এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করার জন্য একটি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করে।

প্রস্তাবনা:
বাংলাদেশের মতো একটি বর্জ্য-চ্যালেঞ্জপূর্ণ এবং পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য, এই বইটি নীতিনির্ধারক, স্থপতি, এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অপরিহার্য নির্দেশিকা। এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর পথপ্রদর্শক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top